ডেস্ক রিপোর্ট : সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা-ইউএনও নাহিদা বারিক বলেন, সোমবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আরও ২৪ জনের লাশগুলো উদ্ধার করা হয়েছে। রোববার উদ্ধার হয়েছিল পাঁচজনের লাশ।
নারায়ণগঞ্জে শীতলক্ষ্যা নদীতে যাত্রীবাহী লঞ্চ ডুবিতে নারী-শিশুসহ ২৯ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে; এখনও সাতজন নিখোঁজ রয়েছেন বলে প্রশাসন জানিয়েছে।
২৯ লাশ উদ্ধার এবং লঞ্চটি টেনে তোলার পর সোমবার বিকালে আনুষ্ঠানিক উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত করা হয়েছে। তবে নিখোঁজদের সন্ধানে নদী এখনও তল্লাশি চলছে।
ঘটনাস্থলে এসে জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, বিআইডব্লিউটিএ-এর উদ্ধারকারী জাহাজ প্রত্যয়ের সাহায্যে ডুবে যাওয়া লঞ্চটি টেনে উদ্ধার করা হয়েছে। ২৯টি লাশ উদ্ধারের পর অভিযান আনুষ্ঠানিকভাবে সমাপ্ত ঘোষণা করা হলো।
এখনও কেউ নিখোঁজ থাকতে পারে জানিয়ে তিনি বলেন, নিখোঁজের সন্ধানে নদীতে তল্লাশি অভিযান চালানো হচ্ছে। একই সঙ্গে নৌ-পুলিশকে দুর্ঘটনার জন্য দায়ী লাইটার জাহাজাটি খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
রোববার সন্ধ্যা ৬টার দিকে সদর উপজেলার কয়লাঘাট এলাকায় সাবিত আল আসাদ নামের লঞ্চটি একটি কার্গো জাহাজের ধাক্কায় ডুবে যায়।
বিআইডব্লিউটিএ-এর চেয়ারম্যান কমোডর সাদেক বলেন, রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় লঞ্চটি ডুবে যাওয়ার পরপর বিআইডব্লিইটিএ, ফায়ার সার্ভিস, কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনীসহ বিভিন্ন সংস্থা একসঙ্গে কাজ শুরু করে। সবার যৌথ সহযোগিতায় সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টায় ডুবে যাওয়া লঞ্চটি উদ্ধার করে নদীর পূর্ব তীরে নিয়ে যাওয়া হয়।
“ডুবে যাওয়া লঞ্চটি তল্লাশি করে মৃতদহেগুলো উদ্ধার করে নৌ-পুলিশসহ জেলা পুলিশের তত্ত্বাবধানে স্বজনদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।”
উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করে নৌ চ্যানেলটি চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
সদর ইউএনও নাহিদা জানান, লঞ্চ ডুবিতে উদ্ধার ২৯ নিহতের মধ্যে শিশু ৬ জন, পুরুষ ৯ জন এবং মহিলা ১৪ জন রয়েছে। লাশ শনাক্তের পর স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
লাশ দাফনের জন্য নিহত প্রত্যেক পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা করে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে বলে ইউএনও নাহিদা জানান।
এছাড়া, এখনও নিখোঁজ সাতজনের সন্ধানে নদীতে তল্লাশি চালানো হচ্ছে বলে তিনি জানান।
নিহতরা হলেন মুন্সীগঞ্জ সদরের নড়াইতলীর মুকলেছ মিয়ার মেয়ে রুনা আক্তার (২৪), চৌদ্দামোড়ার সমুর আলীর ছেলে সোলেমান বেপারী (৬০) ও তার স্ত্রী বেবী বেগম (৬০), মালপাড়ার হারাধন সাহার ছেলে সুনিতা সাহা (৪০), মসুরার অলি উল্লাহর স্ত্রী পখিনা (৪৫), উত্তর চর মসুরার আরিফ হোসেনের স্ত্রী বীথি (১৮) ও তার মেয়ে আরিফা (১), সদরের প্রীতিময় শর্মার স্ত্রী প্রতিমা শর্মা (৫৩), চর কিশোরগঞ্জ মোল্লাকান্দির ফাজিলার ছেলে শামসুদ্দিন (৯০), তার স্ত্রী রেহেনা বেগম (৬৫), বরিশাল জেলার উজিরপুরের উটরার খায়রুল হাওলাদারের ছেলে হাফিজুর রহমান (২৪), তার স্ত্রী তাহমিনা (২০), ছেলে আব্দুল্লাহ্ (১), মুন্সীগঞ্জ সদরের দক্ষিণ কেওয়ারের দেবিন্দ্র দাসের ছেলের নারায়ণ দাস (৬৫), তার স্ত্রী পার্বতী রাণী দাস (৪৫), নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার কল্যান্দীর সোহাগ হোসেনের ছেলে আজমীর(২), মুন্সীগঞ্জ সদরের নুরপুর রিকাবি বাজারের শাহ আলম মৃধা (৫৫), রতনপাতার স্ত্রী মহারাণী (৩৭), ঢাকার যাত্রাবাড়ির রশিদ হাওলাদারের ছেলে আনোয়ার হোসেন (৫৫), তার স্ত্রী মাকসুদা বেগম (৩০), মেয়ে মানসুরা (৭), মুন্সীগঞ্জ সদরের শেয়াগাঁও পূর্বপাড়ার মিঠুন মিয়ার স্ত্রী ছাউদা আক্তার লতা (১৮), শরীয়তপুর জেলার নড়িয়ার নুর আলীর ছেলে আব্দুল খালেক (৭০), ঝালকাঠি জেলার কাঠালিয়ার তোফাজ্জল হোসেনের ছেলে জিবু (১৩), পিরোজপুরের স্বরূপকাঠির সেকান্দার আলীর স্ত্রী খাদিজা বেগম (৫০), নারায়ণগঞ্জ বন্দর উপজেলার সেলসারদীর নুরু মিয়ার ছেলে মো. নয়ন (২৯), মুন্সীগঞ্জ পূর্ব নয়াগাঁওয়ের দুখু মিয়ার মেয়ে সাদিয়া (১৮), মুন্সীগঞ্জ সদরের দক্ষিণগাঁওয়ের দুলু মিয়ার মেয়ে জোলা বেগম (৩৪) ও মুন্সীগঞ্জ মালপাড়ার বিকাশ সাহা (২২)।
নিখোঁজ রয়েছেন মুন্সীগঞ্জ মালপাড়ার বিকাশ সাহার ছেলে অনিক সাহা (১২), সিরাজদিখান তালতলার মুছা শেখের ছেলে জাকির হোসেন (৪৫), সদরের ইসলামপুরের নুরুল ইসলামের ছেলে তানভীর হোসেন, মালপাড়ার সিরাজুল ইসলামের ছেলে রিজভী (২০), মধ্য কোডপাড়ার মতিউর রহমানের ছেলে ইউনুস কাজী, রাজধানীর মিরপুরের সিরাজুল ইসলামের ছেলে সোহাগ হাওলাদার এবং মুশকে আলম মৃধার ছেলে জাকির হোসেন (৪৫)।
রোববার সন্ধ্যা ৬টার দিকে বিআইডব্লিউটিএ টার্মিনাল থেকে ছেড়ে যাওয়া যাত্রীবাহী লঞ্চ ‘এমভি সাবিত আল হাসানকে’ শহরের কয়লা ঘাট এলাকায় একটি কার্গো জাহাজ ‘এসকেএল-৩’ বেপরোয়া গতিতে এসে পেছন থেকে ধাক্কা দিলে লঞ্চটি ডুবে যায়। লঞ্চের অনেকে সাঁতরে তীরে উঠতে সক্ষম হয়েছিলেন।
লঞ্চ ডুবির ঘটনায় জেলা প্রশাসন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট খাদিজা তাহেরী ববিকে আহবায়ক করে সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। তদন্ত কমিটিকে আগামী পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া, বিআইডব্লিউটিএ পরিচালক (নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগ, ঢাকা) রফিকুল ইসলামকে আহবায়ক করে চার সদস্যের আরও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই তদন্ত কমিটিকে আগামী পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
Design & Developed BY- zahidit.com
Leave a Reply